লোকায়তকী?

যে ‘বৈশ্বিক’ এবং স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক-প্রতিবেশের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশ পরিচয়রাষ্ট্র ক্রিয়াশীল, সেই সামগ্রিক পরিবেশের মধ্যেকার জীবনসকলের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বিউপনিবেশিক, পুঁজিবাদ- পুরুষতন্ত্রবিরোধী দর্শন-তত্ত্ব- চিন্তা-বাহাস  নির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ একটা জনসমষ্টি ‘লোকায়ত’।

আমরা জানি, বাংলাদেশ নামে একটা ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক-ভৌগলিক সত্তার মধ্যে আমাদের অবস্থান, আর এই অবস্থানের কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত ‘বৈশ্বিক’-ঔপনিবেশিক-পুঁজিবাদী জ্ঞান, জ্ঞানব্যবস্থা ও জ্ঞান প্রতিষ্ঠানের সাথে ‘সমঝোতা’ ও ‘মোকাবেলা’ করতে হয়। ‘বৈশ্বিক একাডেমিয়া’ও তার মধ্যে পড়ে।

‘আধুনিক’ এবং ‘অ/অনাধুনিক’ সব রকম জ্ঞান, জ্ঞানব্যবস্থা, জ্ঞানের রাজনীতি এবং এসবের মধ্যেকার মেশামিশিগুলাকে আমরা স্বীকার করতে, জানতে-বুঝতে চাই। যাতে, যে ‘ঔপনিবেশিকতাবাদি আধুনিক’ আমাদের নানান সমাজের বহুরকমের জ্ঞান-অভিজ্ঞতাকে মুছে দিয়েছে,আবছায়াকরণ করেছে, আত্মসাত করেছে, তুচ্ছ  বা ছোট করেছে অথবা ‘জ্ঞান নয়’ সাব্যস্ত করেছে, সেই ‘ঔপনিবেশিকতাবাদি আধুনিক’র বিউপনিবেশিক বিচার ও পর্যালোচনা জন্যে জ্ঞান পুনর্দাবী,  তত্ত্বায়ন , চিহ্নিতকরণ এবং সৃষ্টি করতে চাই।

লোকায়ত’র অনেকেই বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের অংশ ছিলাম। বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র ছিলো একটা সামাজিক অনুদানে চলা বহুশাস্ত্রীয় গবেষণা ও চিন্তন প্রতিষ্ঠান। সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে যুক্ত অনেক সংগঠক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী এবং গবেষকদের একটা সম্মেলক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতো এই সংগঠন। বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের কর্ম/যাত্রার অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমরা, যার প্রতিফলন লোকায়ত’র চিন্তা-কাজ-সাধনায় সব সময় থাকবে।

অনড়- স্থিরকাঠামো এবং রাষ্ট্রবাদী আমলাতান্ত্রিকতায় লোকায়তকে সীমাবদ্ধ না রেখে, সমাজ ও পরিপ্রেক্ষিতের সাপেক্ষে আন্তঃযোগাযোগ ও সম্মিলনী যুক্ততার নীতি-পদ্ধতির ভিত্তিতে চির-রূপান্তরশীল কাঠামোর অনুশীলন আমরা করতে চাই । এই আন্তঃযুথ ভিত্তিক যুক্ততা ও সম্মিলনীর নীতি-পদ্ধতি লোকায়তকে পরিপ্রেক্ষিত অনুসারে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরশীলতা এবং বহুমাত্রিক কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয়, লিপ্ততার নতুন ধরণ গ্রহণের সুযোগ দেয়, বন্ধু-সহযোগী-মিত্রদের সাথে মিলে  জ্ঞান অর্জন- বর্জন-পুনঃশিক্ষনের সুযোগ দেয়, নিজেদের এবং সমাজ ও সংঘের রূপান্তর ঘটাতে সাহায্য করে।

কাজ বলতে আমরা কি বুঝি

কাজ বলতে আমরা জীবনের সব কাজকেই বুঝি। জীবন আর বাঁচার মানে কী- তা তৈরী এবং এই মানেটাই প্রতিনিয়ত বদলানো, ন্যায্যতা আর মুক্তির ধ্যান-ধারণার পুনর্দাবী করা- এমন অনেক কিছুকেই আমরা কাজ হিসাবে বুঝি। ফলে অন্নসংস্থান থেকে শুরু করে যৌথতায় চিন্তা-তৎপরতা চর্চা , জুলুমশাহীর মধ্যে বেঁচে থাকার বহুবিধ যন্ত্রণায়-বেদনায় একে অন্যের, যুথ যুথের যত্ন নেয়া- সবই আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে।

আধুনিক-পুঁজিবাদী চিন্তা ও ব্যবস্থায় শ্রমের যে অর্থ- সে অর্থে আমরা ‘কাজ’কে বুঝতে চাই না। আমাদের কাছে কাজের যে অর্থ, তা এমন জীবনচর্চা, যা ঔপনিবেশিক-পুজিবাদী-পুরুষতান্ত্রিক ‘উৎপাদনশীলতা , ‘বস্তুময়তা’ আর প্রতিযোগিতার ধারণার বাইরের জিনিস। এ জন্যে কাজের  ধারণা বুঝাতে আমরা ‘সাধনা’র ধারণাকে পর্যালোচনামূলকভাবে গ্রহণ করতে চাই। এই ধারণা দুনিয়ার বহু পরম্পরায় চর্চিত এমন সব জীবন-চর্চা বুঝায়, যা ন্যায্যতা আর মুক্তির ধ্যান-ধারণা ও জীবনব্যাপী অনুশীলনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত।

এসব অর্থেই আড্ডা, বাহাস , সামাজিক সংলাপ, যৌথতায় বেঁচে থেকে সমাজে সক্রিয় থাকার বিভিন্ন পথ-পদ্ধতি অনুসন্ধান করা, তীর্থ করা বা জীবন রূপান্তরমুলক সফর থেকে শুরু করে জীবন-সমাজ রূপান্তরকামী শিক্ষা- গবেষণা-অধ্যয়নে আগ্রহীদের নির্দেশনা দেয়া- তত্ত্বাবধান করা- সবই আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে।

বহু যুথের আন্তঃযোগাযোগের যৌথতার ভিত্তিতে লোকায়ত এমন একটা সমাজ-জীবন( কমিউনিটি) নির্মাণের একটা ভাবকল্প প্রস্তাব করে, যেখানে ‘ঘর’, ‘বাহির’, ‘মাঠ’, ‘কেন্দ্র’, ’অফিস’ থেকে শুরু করে আনুষ্ঠানিক- অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন সংগঠন, আখড়া – দরবার- প্রার্থনাস্থান সব খানের মানুষের যোগাযোগে- বিনিময়ে নতুন জীবনের সামাজিক সাধনা চলে। এভাবে, লোকায়ত ভাবকল্প ‘বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ’ এবং ‘অনুশীলন-ব্যবহারিক কাজ’-এর আধুনিক বাইনারিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং লোকায়ত নিজে এই অনুশীলনে রত থাকতে চায়।

কিভাবে কাজ চলে আমাদের?

স্বেচ্ছাব্রতীদের শ্রম ও মনোযোগের সমন্বয়ে লোকায়ত সক্রিয় থাকে। সদস্য আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের অংশগ্রহণে তহবিল যোগান হয়। সংগঠনের আগ্রহ, অধিকার এবং বি-ঔপনিবেশিক অর্থে ‘প্রয়োজন’ বা অগ্রাধিকার বিবেচনায় আমরা আমাদের কাজের এলাকা, বিষয় এবং ধরণ নির্ধারণ করি।

এই মুহুর্তে আমাদের বেশিরভাগ জিনিসপত্র বাংলায় হলেও ধীরে ধীরে অন্যান্য স্থানীয় ভাষায় এবং দুনিয়ার নানা অংশের মানুষজনের সাথে যোগাযোগের জন্যে সেসব ইংরেজীতে আনতে ও প্রকাশ করতে চাই।

 

আপনি কি লোকায়ত সাথে যুক্ত হতে চান? সহযোগিতা করতে চান

আপনি যদি লোকায়ত’র একজন স্বেচ্ছাব্রতী হতে চান, বা অন্য কোনো যোগ্যতায় বা উপায়ে আমাদের সাথে কাজ করতে চান, বা আমাদের সম্পর্কে আরো জানতে চান, তাহলে আপনি আমাদের সাথে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বা সাক্ষাতে আলাপ করতে পারেন।

অনেক কাজের জন্যে সব সময় আমরা স্বেচ্ছাকর্মী খুঁজি।  যেমন, ওয়েব সাইট নির্মাণ- ডিজাইন-রক্ষাণাবেক্ষণ, গ্রাফিক ডিজাইন, অনুবাদ, কপি-সম্পাদনা, অডিও সম্পাদনা, ভিডিও সম্পাদনা, ট্রান্সক্রিপ্টিং, অনুষ্ঠান সংগঠন, গবেষণা – ইত্যাদি।

নতুন নতুন উদ্যোগে স্বেচ্ছাকর্মী দরকার হলে আমরা তা আমাদের সামাজিক মাধ্যমের পেজ এবং ওয়েব সাইটে জানাই।

 

সরাসরি স্বেচ্ছাশ্রম দেয়ার বাইরে কিভাবে কেউ লোকায়ত কাজে সহযোগিতা করতে পারে?

  • আমাদের কন্টেন্ট/রচনা ইত্যাদি শেয়ার করে, প্রচার করে আর আমাদের যতভাবে পারা যায়, ভালবেসে।
  • আমাদের রচনা ইত্যাদির ব্যাপারে আপনার পাঠ-প্রতিক্রিয়া আমাদের জন্যে খুবই দরকারী আর সেসব আপনারা আমাদের ফেসবুক পেইজ বা সাইটেই জানাতে পারেন।
  • তহবিল দান করতে পারেন লোকায়তকে। কাজ করতে তহবিল দরকার হয়। তবে, যেহেতু আমাদের ‘আনুষ্ঠানিক কাঠামো’ নাই তহবিল নেয়ার, দান করতে চাইলে আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন, আলাপ করে আমরা গ্রহণযোগ্য কোনো একটা উপায় বের করবো ।

লোকায়তর সাথে সহযোগিতা/ সমর্থন/ সংহতি চর্চার অন্যান্য উপায়

  • গবেষণা এবং শিক্ষা/অধ্যাপনার কাজে আমাদের সদস্যদের সম্মানি/পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পরামর্শক/ শিক্ষক/অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত/ … করতে পারেন। আমাদের সদস্যদের মধ্যে দর্শন, ক্রিটিক্যাল তত্ত্ববিচার, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস, নারীবাদ, লিঙ্গ রাজনীতি, প্রতিবেশ, ইন্টারসেকশনালিটি, বাংলার ইতিহাস, বাউল-ফকির-সহজিয়াসহ বিভিন্ন ভক্তিধারা, সাহিত্য, সংস্কৃতি অধ্যয়ন, সংগঠন/এক্টিভিজম, গবেষণা সমন্বয়, অনুবাদ, কাউন্সিলিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মানুষজন আছেন।
  • যেসব সংগঠন/ সংস্থার সাথে আমাদের চিন্তা- দর্শন- লক্ষ্য,  কাজের এলাকা এবং অগ্রাধিকার  মিলবে, তাদের সাথে আমরা কাজ করতে চাই।
  • আমরা সারা দুনিয়ার জুলুমবিরোধী লড়াই- সংগ্রাম- আন্দোলনের  সাথে সংহতি রচনা করতে চাই।

 

যোগাযোগঃ 

ইমেইলঃ lokayotobidyaloy@gmail.com

ফেসবুক পেইজঃ  https://www.facebook.com/lokayotobidyaloy/

[রচনাকালঃআষাঢ় ১৪২৭, জুলাই ২০২০